দুই দফায় ১০-১২টি হাতে তৈরি গ্রেনেডের চালান ঢাকায় যেকোন সময় ঘটতে পারে অঘটন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে দুই দফায় অন্তত ১০-১২টি হাতে তৈরি গ্রেনেডের চালান ঢাকায় এক সহযোগীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিল ইমতিয়াজ অমি ও মাহমুদ হাসান। তৃতীয় দফা গ্রেনেড নিয়ে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লার চান্দিনায় গ্রেফতার হয় এই দুই জঙ্গি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, আগের দুই চালানের গ্রেনেড নিয়ে তারা উদ্বেগের মধ্যে আছেন। কারণ এসব গ্রেনেড দিয়ে কোথাও হামলা করা হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এ কারণে অমি ও হাসান ঢাকার সায়েদাবাদে যার কাছে গ্রেনেডের চালান দিয়েছিল, তাকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ৭ মার্চ সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লার চান্দিনায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে চেকপোস্টে
থামানো হলে দুই জঙ্গি পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে দুই জঙ্গি। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অমি প্রথমে নিজের পরিচয় আড়াল করে জসিম পরিচয় দেয়। পরে জানা যায়, অমি এক বছর আগে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে। তার পুরো নাম আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি। সানবীম স্কুলে ‘এ’ লেভেল পড়া অবস্থায় বাসা ছেড়ে যায় সে। অন্যদিকে মাহমুদ হাসানের বাড়ি বান্দরবানে। অমি বর্তমানে পুলিশ পাহারায়  চিকিৎসাধীন ও হাসান সাত দিনের রিমান্ডে পুলিশে হেফাজতে রয়েছে। কুমিল্লা জেলা পুলিশের সঙ্গে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি এই ঘটনার তদন্ত করছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অমি ও হাসানের সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। এ জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে এই দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের অন্য আস্তানাগুলো শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
সিটিটিসির একটি সূত্র জানায়, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আস্তানায় জঙ্গিদের কাছে যে ধরনের হাতে তৈরি গ্রেনেড পাওয়া গেছে তা অনেক বেশি শক্তিশালী। এগুলো আগের হাতে তৈরি গ্রেনেডগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বড়। এ জন্য আতঙ্কটা একটু বেশি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুটি চালান ঢাকার সায়েদাবাদে এক সহযোগীর কাছে দুই দফা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে। সেগুলো ঢাকা কিংবা ঢাকার আশেপাশের কোনও আস্তানায় রাখা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
সিটিটিসির বোমা বিশেষজ্ঞ একজন কর্মকর্তা জানান, হাতে তৈরি হলেও উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডগুলোতে যে ধরনের উপকরণ এবং যতবড় করে তৈরি করা হয়েছে, তাতে সহজেই একটি ছোটখাটো ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে। এসব নিয়ে কোথাও হামলা চালানো হলে তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই আগে আসা হাতে তৈরি গ্রেনেডগুলো নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতাকর্মী ও সদস্যদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত বা গ্রেফতার হলেও এখনও অনেকেই অধরা রয়েছে। বর্তমানে মাইনুল ইসলাম মুসা নামে একজন নব্য জেএমবিকে নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদীসুর রহমান সাগর, রাশেদ ওরফে র‌্যাশসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন শীর্ষ নেতা পলাতক রয়েছে। তারাই নতুন করে কোনও হামলার ফন্দি এঁটে থাকতে পারে।
অমি ও হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন কর্মকর্তা জানান, অমির ভাষ্য অনুযায়ী তারা বাংলাদেশে কোনও মুসলিম ধর্মালম্বীকে টার্গেট করবে না। তাদের টার্গেট হলো ভিন্নমতালম্বী ও ভিন্নধর্মালম্বী লোকজন। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা ও পূর্ব নির্ধারিত টার্গেট ছাড়া তারা হামলা করবে না। এসব ছাড়াও অমি ও হাসান জিজ্ঞাসাবাদে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে, যা যাচাই-বাছাই করছেন গোয়েন্দারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ‘অমি ও হাসান বলেছে, তাদের কাছে মাঝে-মধ্যেই ২-৩ জন বিদেশি নাগরিক আসতো। তারা আররি ভাষায় কথা বলতো। কিন্তু তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেনি তারা।’ গোয়েন্দারা বলছেন, অমি ও হাসানের দেওয়া তথ্য গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

No comments: